Ad Code

Responsive Advertisement

স্ট্রোক হলে প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ (What should we do during brain stroke), প্রতিবেদন, নির্বাচিত

কি করা উচিত স্ট্রোক হলে আসুন জেনে নেই, 

What should we do durin brain stroke
What should we do during brain stroke

 জীবন-মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠে যখন কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। স্ট্রোকের ফলে রোগী একদিকে যেমন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন ঠিক তেমনি অন্যদিকে রোগীকে তার আত্মীয়-স্বজনেরা বাঁচিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে থাকেন । এমন অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর কাছের দূরের সকল আত্মীয়-স্বজনেরা উপস্থিত হয়ে তাঁকে একনজর দেখার জন্য ভিড়ও জমান । যেন দ্রুত রোগীকে শেষবারের মত একনজরে জীবিত দেখে নেওয়ার তাগিদ অনুভব করতে পারেন। মস্তিষ্কের শিরায় রক্ত জমে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি স্টোকের সবচেয়ে পরিচিত অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এ ঘটনাটির ফলে শিরার নিকটস্থ কোষগুলো দ্রুত মারা যেতে শুরু করে যার ফলে মস্তিষ্ক বিকল হয়ে যেতে শুরু করে। তবে মহান আল্লাহ তা'লা রহমতে, বর্তমানে রোগের কার্যকর চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের হাত হতে রক্ষার ক্ষেত্রে। মস্তিস্কের রক্তক্ষরণের মতো অবস্থা দেখা দিলে যতদ্রুত সম্ভব নিউরোলজিস্টকে দেখাতে হবে। এ ব্যাপারে বহু আলোচিত দ্য ইকোনমিস্ট সম্প্রতি স্ট্রোকের জরুরি চিকিৎসা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ।


প্রথমত ‘থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি’মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা স্ট্রোকের একটি অন্যতম চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত করা হয় , এই প্রকার চিকিৎসার ফলে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে মস্তিষ্কের জমাট বাঁধা রক্ত দ্রুত গলে যায় এবং রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হতে থাকে। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক দু'টি ভিন্ন হলেও উভয় ক্ষেত্রেই এই থেরাপি বা ওষুধের মাধ্যমে জমাট বাঁধা রক্ত গলিয়ে ফেলা সম্ভপর হতে পারে। তবে স্ট্রোকের প্রাথমিক অবস্থাতে যদি  কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই থেরাপি দেওয়া হয় তবে মস্তিষ্কের ক্ষতি কম হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে এবং প্যারালাইসিস বা দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা তৈরির বিষয়গুলোও কমে যায়। স্ট্রোকের চিকিৎসার এই বিষয়টিকে‘টাইম ইজ ব্রেইন’নামে নামকরণ করেছেন নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা।

এই প্রকার রোগীকের ক্ষেত্রে রোগীর লক্ষণ দেখেই দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা এবং ওষুধ প্রয়োগ করেন। তবে এ ক্ষেত্রে  একটি ধাপ আগেই সম্পন্ন করেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা আর তা হচ্ছে কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যানারে রোগীর মস্তিষ্ককে স্ক্যান করা। বিশেষজ্ঞগণ প্রথমত সিটি স্ক্যান করে থাকে রোগীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রোগীর রক্তক্ষরণের সময়ে যদি রোগীকে প্রথমেই থ্রম্বোলাইটিক ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়ে তবে এক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাই এ জন্য সিটি স্ক্যানের বিষয়টি এতো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সিটি স্ক্যান বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সিটি স্ক্যান করার মতো বিষয়টিতে সময় বাঁচানোর বেশ কয়েকটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে গত কয়েক দশকে। যার ফলে বিশেষভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন চিকিৎসকেরাও স্ট্রোকের রোগী চেনার ক্ষেত্রে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো  ধীরে ধীরে প্রযুক্তির কল্যাণে সিটি স্ক্যানার মেশিনও জরুরি বিভাগে সহজলভ্য হচ্ছে। এ ছাড়াও স্ক্যান করার আগে ইনজেকশনের ক্ষেত্রে সরাসরি ওষুধ প্রয়োগের বিষয়টিও এখন চিকিৎসকদের নখদর্পণেই থাকে।

তবে, অনেক বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবহেলাও করে বসতে পারেন যখন তারা চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারাহুরো করে থাকেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মানবিক উপাদান বা মানসিক সাহায্য। এক্ষেত্রে স্ট্রোকের রোগীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন ইসরায়েলের সরোকা ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের নিউরোলজিস্ট গাল ইফারজেন। ফলে এক্ষেত্রে গবেষক ইফারজেন খেয়াল করে দেখেন যে, বেশ জরুরি হয়ে দাঁড়ায় যখন চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে স্ট্রোকের রোগীকে আনা হয় তখন তাঁর সাথে তাঁর বন্ধু, স্বজন বা পরিবারের সদস্যদের থাকাটা। স্ট্রোকজনিত ঘটনার ক্ষেত্রে স্ট্রোকের রোগী একা ডাক্তারের কাছে আসার চেয়ে তাঁর স্বজনদের নিয়ে একসঙ্গে আসাটা রোগীর অবস্থা কিছুটা ভালো থাকে। এ ব্যপারে এই গবেষক পর্যবেক্ষণ করেছেন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রোগীদের নিয়ে। ‘মেডিসিন’ সাময়িকীতে তাঁর গবেষণা সংক্রান্ত নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।

নিবন্ধটির গবেষণার অংশে প্রকাশিত হয়েছে যে, রোগীর চিকিৎসা সঠিকভাবে হওয়া এবং সিটি স্ক্যানও দ্রুত সঠিকভাবে করাটা বিশেষভাবে নির্ভর করে রোগীর সাথে কয়জন এলো তার সাথে এক্ষেত্রে রোগীর সাথে দু'জনের বেশী এলে বেশী উত্তম বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। এর মূল কারণ হলো যেসব রোগীদের মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্ত গলানোর জন্য দ্রুত ওষুধ দেওয়া দরকার হয়ে তাদের জন্যও জরুরি চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়ে থাকে। তবে গবেষকরা এখন পুরোপুরি নিশ্চিত নন এ ব্যাপারে যে, রোগীর পাশে স্বজনদের উপস্থিতির কারণে জরুরি চিকিৎসা মেলে কি না সে বিষয়টি নিয়ে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সিটি স্ক্যান বেশ দ্রুত সম্পন্ন হয় যখন স্ট্রোকের রোগীর সঙ্গে যদি একজন থাকে। এক্ষেত্রে ১৫ মিনিট পর্যন্ত সময় বাঁচতে পারে যদি রোগীর সঙ্গে কেউ না থাকার চেয়ে একজন সঙ্গী থাকে। অন্যদিকে ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় বাঁচানো যায় যদি রোগীর সঙ্গে দু জন থাকে, তবে এক্ষেত্রে দুজনের বেশি হলে খুব একটা বেশি ফায়দা হয় না।

গবেষক ইফারজেন রোগীর সঙ্গে যাঁরা থাকবেন তাঁরা রোগীর নিকটাত্মীয় না কি স্বজন সে বিষয়টি অবশ্য রেকর্ড রাখেননি। এমনকি  কীভাবে চিকিৎসার দেরি হওয়া ঠেকায় তারও কোনো রেকর্ড নেই তাদের কাছে। তবে এ বিষয়ে গবেষক ইফারজেনের ধারণা যে, অনেকখানি সময় বাঁচিয়ে দেয়া সম্ভব যদি রোগীর ব্যাপারে স্বজনদের কিছুটা বাড়তি যত্ন নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে গবেষকেরা অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, খুব কমই গবেষণা করা হয়েছে চিকিৎসার সময় রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনদের উপস্থিতি কতটা প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে। আর তাই বর্তমানে  হাসপাতালে নতুন একটি নিয়ম করেছে যে, জরুরি বিভাগে রোগীর সঙ্গে পরিবারের কেবল একজন সদস্য উপস্থিত থাকতে পারবেন।

তবে এক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের একত্রে হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয় এই কারণে যে তড়িঘড়ি চিকিৎসার সময় যাতে চিকিৎসকদের কাজে ব্যাঘাত না ঘটে।  যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেদের ২০০৯ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, চিকিৎসকদের পক্ষে সঠিক চিকিৎসা দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল, এর মূল কারণ হচ্ছে স্ট্রোকের চিকিৎসার সময় মায়াকান্না করে এমন স্বজনদের উপস্থিতি। অবশ্য,অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি চিকিৎসা মানে কোনো হেরফের ঘটিয়েছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি কার্ডিওপালমোনারি রিসাচসাইটেশন, পেডিয়াট্রিক ট্রমার মতো বিষয়গুলোতে। অবশ্য এই গবেষণায় কিছু সীমাবদ্ধতার কথা মেনে নিয়েছেন গবেষক ইফারজেন, আর এর মূলকারণ হলো, এই গবেষণায় নমুনার পরিমাণ কম দেখানো।

ইতিমধ্যে ইফারজেন সরোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবর্তনও এনেছেন। এক্ষেত্রে  ইফারজেন বলেন যে, ‘আমরা স্ট্রোকের রোগীদের সঙ্গে এখন দুজনকে আসার অনুমতি দিচ্ছি। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের একা আসা নিরুৎসাহিত করে স্বজনসহ উপস্থিত হতে পরামর্শ দিচ্ছি।’

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ