Ad Code

Responsive Advertisement

আল-কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান! সামঞ্জস্যপূর্ণ নাকি অসামঞ্জস্যপূর্ণ? - পর্ব ১

ডঃ জাকির নায়েক...

ভূপৃষ্টে মানুষের অস্তিত্বের প্রথম দিন থেকেই তারা প্রকৃতিকে বুঝতে চেয়েছে, সৃষ্টি পরিকল্পনায় নিজেদের মর্যাদা এবং জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সত্য ধারাবাহিকতায় শত শত বছরব্যাপী বিভিন্ন সভ্যতার মধ্য দিয়ে সুসংবদ্ধ ধর্ম মানবজীবনকে সুসংগঠিত এবং ইতিহাসের গতি নির্ধারণ করেছে। কিছু ধর্ম তো লিখিত পুস্তক আকারে আছে এবং অনুরাগীরা সে গুলোকে ঐশী প্রত্যাদেশ হিসেবে দাবী করে।আর কিছু ধর্ম আছে যেগুলো কেবল মাত্র মানবিক অভিজ্ঞতার ফসল। ইসলামী বিশ্বাসের মূল উৎস হচ্ছে, আল-কোরাআন। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে,এটা আল্লাহ পক্ষ থেকে এসেছে এবং তা গোটা মানব জাতির জন্য হেদায়েত। কোরআন যেহেতু সকল যুগের জন্য,তাই তা সকল যুগের জন্যই সামঞ্জস্যপণ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,কোরআন কিসে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। 


আল-কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান! সামঞ্জস্যপূর্ণ নাকি অসামঞ্জস্যপূর্ণ? - পর্ব ১

আমি এ পুস্তিকায় কোরআনের ঐশী উৎসের আলোকে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নিরীখে মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাসের বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা দিতে চাই। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে এমন সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন ‘অলৌকিকতা’ অথবা ‘অনুভূত অলৌকিকতা’ মানবিক যুক্তি ও কারণের উপর অগ্রগণ্য ছিল। ‘অলৌকিকতা’র সাধারন সংজ্ঞা হল, যা স্বাভাবিক নিয়ম বহিভূর্ত এবং মানুষের কাছে যার কোন ব্যাখ্যা নেই। কোন ‘অলৌকিক’ বিষয়কে গ্রহণ করার আগে আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ১৯৯৩ সনে মোম্বাই থেকে প্রকাশিত‘The Times of india’পত্রিকা লিখেছে,‘বাবা পাইলট’ নামক এক ব্যক্তি পানির রিজার্ভারের নীচের একাধারে তিন্তদিন ও রাত কাটানোর দাবী করে। সাংবাদিকরা সে রিজার্ভারটির তলদেশ পরীক্ষার দাবী জানালে সে তাদেরকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। তার যুক্তি ছিল,যে মা সন্তান প্রসব করে, সে মায়ের পেট কিভাবে পরীক্ষা করা যায়? এখানে ‘সাধু’ ব্যক্তিটি অবশ্যই কিছু লুকানোর চেষ্টা করেছে। সে আত্ম প্রকাশের লক্ষ্য প্রতারণার কৌশল গ্রহণ করেছে। কোন আধুনিক ব্যক্তি কিংবা সামান্যতম যৌক্তিক চিন্তার অধিকারী লোকও এ জাতীয়‘অলৌকিকতা'কে গ্রহণ করতে পারেনা। এজাতীয় মিথ্যা অলৌকিকতা যদি ঐশী পরীক্ষা হয় তাহলে,বিশ্বের যাদু কৌশল ও মিথ্যার রূপকার প্রসিদ্ধ যাদুকরদেরকে সত্যিকার আল্লাহভক্ত মানুষ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। ঐশী গ্রন্থ অবশ্যই অলৌকিক হবে। এজাতীয় দাবী যুগের অবস্থাভেদে পরীক্ষাযোগ্য হওয়া উচিত। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে,কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবতার প্রতি দয়া হিসেবে নাযিলকৃত সর্বশেষ গ্রহ্ন যা অলৌকিকতার সেরা। এখন আমার এই বিশ্বাসের যথার্থতা পরীক্ষা করে দেখবো। 


কোরআনের চ্যালেঞ্জ

সকল সংস্কৃতিতে,সাহিত্য ও কবিতা মানুষের ভাব প্রকাশ ও সৃজনশীলতার হাতিয়ার। সাহিত্য ও কবিতা বিশ্বে এক সময় গর্বের মর্যাদা লাভ করেছিল যা বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লাভ করেছে।

এমনকি অমুসলিম পন্ডিতেরা পর্যন্ত স্বীকার করেছে যে, কোরআন হল সর্বোৎকৃষ্ট আরবী সাহিত্য। ভূপ্রষ্ঠে এর চাইতে শ্রেষ্ঠ সাহিত্য দ্বিতীয়টি নেই। কোরআন মানবজাতিকে এরূপ গ্রন্থ আবিষ্কারের চ্যালেঞ্জ দিয়েছে।

আল্লাহ বলেনঃ

‘আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি, এ বিষয়ে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে,তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস।আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও সাথে নাও- যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।আর যদি তা না পার,অবশ্য তোমরা তা কখনও পারবেনা,তাহলে,সে দোযখের আগুন থেকে পানা চাও,যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। সূরা বাকারা-২৩-২৪

কোরআন তার যে কোন একটি মাত্র সূরার মত অনুরূপ আরেকটি সূরা তৈরির চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। কোরআনে বহুবার একই ধরণের চ্যালেঞ্জের পুনরাবৃত্তিও হয়েছে। বর্তমান কাল পর্যন্ত কোরআনের সূরার মত সৌন্দর্য, অলংকার, গভীরতা ও অর্থের দিক থেকে সমমানের আরেকটি সূরা চ্যালেঞ্জ অপূরণকৃত রয়ে গেছে।বর্তমান যুগের কোন লোক পৃথিবী চেপ্টা এ মর্মে সর্বোত্তম কাব্যিক ভঙ্গীতে কোন ধর্মীয় পুস্তকের বক্তব্যকে মেনে নেবে না। কেননা, আমরা যে যুগে বাস করছি, সে যুগে মানবিক কারন, যুক্তি ও বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কোরআনের অতি চমকপ্রদ ও সুন্দর ভাষার জন্য অনেকেই একে ঐশী গ্রন্থ হিসাবে মেনে নিতে চাইবে না। কোন ঐশী গ্রন্থের দাবীদার কে অবশ্যই যুক্তি ও কারণের শক্তির দিক থেকে ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

প্রখ্যাত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনেষ্টাইন বলেছেনঃ বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ। আসুন আমরা কোরআন নিয়ে গবেষনা চালাই যে,তা বজ্ঞানের সাথে সামজ্ঞস্যপূর্ন না অসামজ্ঞস্যপূন্য। কোরআন কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়, বরং নিদর্শন গ্রন্থ। এতে ৬ হাজার নিদর্শন (আয়াত) আছে। এক হাজারেরও বেশী আয়াত বিজ্ঞানের মূল বিষয় বসতু নিয়ে আলোচনা করেছে।

আমরা সকলে জানি যে, বিজ্ঞান অনেক সময় সিদ্বান্ত পরিবর্তন করে। এই পুস্তিকায় আমি কেবল বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য (Fact) নিয়ে আলোচনা করবো, কল্পনা বা ধারনার উপর নির্ভরশীল তত্ত্ব নয়, যা প্রমানিত হয়নি।


জ্যোতিষ শাস্ত্র

বিশ্ব সৃষ্টি ও মহা বিস্ফোরণ (বিগ ব্যাংগ)

বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে জ্যোতিবিদের প্রদত্ত ব্যাখ্যা ব্যাপকহারে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে নভোচারী ও জ্যোতিবিদদের সংগৃহীত ও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষামূলক উপাত্ত দ্বারাও তা সমর্থিত হয়েছে। মহা বিস্ফোরণ তত্ত অনুযায়ী মহাবিশ্ব ছিল প্রথমে একটি বিশাল নীহারিকা। পরে ২য় পর্যায়ে তাতে এক বিরাট বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে ছায়া পথ তৈরী হয়। এগুলো পরে তারকা, গ্রহ, সূর্য ও চন্দ্র ইত্যাদিতে রুপান্তরিত হয়। বিশ্বের সূচনা বিষ্ময়কর এবং দৈবক্রমে তা ঘটার সম্ভাবনা শূন্য পর্যায়ে।

পবিত্র কোরআন মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াতে বলেছে, 

“কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মূখ বন্ধ ছিল, তারপর আমি ঊভয়কে খুলে দিলাম।” - সূরা আম্বিয়া-৩০


ছায়াপথ সৃষ্টির আগে প্রাথমিক গ্যাস পিন্ড

বিজ্ঞানীরা একমত যে ,মহা বিশ্বে ছায়াপথ তৈরীর আগে আকাশ সম্পর্কিত পদার্থগুলো গ্যাস জাতীয় জিনিস ছিল।সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিপুল সংখ্যক গ্যাসজাতীয় পদার্থ কিংবা মেঘ, ছায়া পথ তৈরীর আগে বিদ্যমান ছিল।আকাশ সম্পর্কিত প্রাথমিক পদার্থকে গ্যাস অপেক্ষা ধুঁয়া বলা বেশী সঙ্গত।কোরআন মজীদ ধুঁয়া দ্বারা মহাবিশ্ব সৃষ্টির ঐ অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ

“তার পর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা কিছু ধূঁম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবী বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা সেচ্ছায় আসলাম। - সূরা হা-মীম সাজদাহ-১১

এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, এ অবস্থায় মহাবিস্ফোরণেরই ফল এবং মহানবী মোহাম্মদ (ছঃ) এর আগে এ বিষয়টি কারো জানা ছিল না।তাহলে প্রশ্ন জাগে, এ জ্ঞানের উৎস কি ?


পৃথিবীর আকার গোল

প্রথম যুগে মানুষ বিশ্বাস করত যে, পৃথিবী চেপ্টা ছিল।বহু শতাব্দী ব্যাপী মানুষ দূরে সফরে যেতে ভয় পেত কি জানি পৃথিবীর কিনারা থেকে পড়ে যায় কিনা।স্যার ফ্রনকিস ড্র্যাক প্রথম প্রমান করেন যে, পৃথিবী গোলাকার । তিনি ১৫৯৭ সনে পৃথিবীর চারপাশে নৌভ্রমন করেন।আমরা দিবা রাত্রির আবর্তনের ব্যাপারে কোরআনের নিন্মোক্ত আয়াতটি বিবেচনা করতে পারি।

“আপনি কি দেখেনা আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান? -সূরা লোকমান - ২৯

অর্থাৎ রাত আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিন ও আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে রাতে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবী গোলাকৃতির হলেই কেবল এ ঘটনা ঘটতে পারে ।

নিম্নের আয়াত দ্বারাও পৃথিবী যে গোলাকার তা বুঝা যায়্‌ আল্লাহ বলেনঃ

তিনি আসমান ও জামিন কে সৃষ্টি করেছেন যথার্থভাবে। তিনি রাতকে দিন দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন।” সূরা যোমর -৫

আয়াতে ব্যবহৃত (আরবী) শব্দের অর্থ হলো কুন্ডলী পাকানো বা কোন জিনিসকে প্যাঁচানো । যেমন করে মাথায় পাগড়ী প্যাঁচানো হয়। রাত ও দিনের আবর্তন তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী গোলাকার হয়।

পৃথিবী বলের মত গোলাকার নয়, বরং মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা।

নিম্নের আয়াতে পৃথিবীর আকৃতির বর্ননা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

“তিনি পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।” সূরা নাযিআত -৩০

আরবী শব্দ এর দুটো অর্থ আছে। একটি অর্থ হলো উঠপাখির ডিম।উটপাখীর ডিমের আকৃতির মতই পৃথিবীর আকৃতি মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা । অন্য অর্থ হল ‘সম্প্রসারিত করা’। উভই অর্থই বিশুদ্ধ।

কোরআন এভাবেই পৃথিবীর আকৃতি বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা করেছে।অথচ যখন কোরআন যখন নাযিল হয় তখন প্রচলিত ধারনা ছিল পৃথিবী হচ্ছে চেপ্টা।


চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো

আগের সভ্যতা গুলোর ধারণা ছিল,চাঁদের নিজস্ব আলো আছে।কিন্তু বিজ্ঞান বর্তমানে আমাদেরকে বলে যে,চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো।এ সত্যটি কোরআন আমাদেরকে আজ থেকে ১৪শ বছর আগে বলেছে।আল্লাহ বলেনঃ

“কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমণ্ডলকে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।”- সূরা ফুরকান-৬১

আরবীতে সূর্যকে (আরবী ) বলে।কোরআনে (আরবী )শব্দ দ্বারাও সূর্য বুঝানো হয়েছে।এর অর্থ হল,বাতি বা র্মশাল।অন্য জায়গায় ,সূর্যকে (আরবী) উল্লেখ করা হয়েছে।এর অর্থ হল ‘জ্বলন্ত কিরণোজ্জল বাতি বা মশাল।’অন্য আরেক জায়গায়, একই অর্থ বুঝানোর জন্য (আরবী ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।এর অর্থ হল ‘কিরণোজ্জল সূর্য ’।এই তিনটি বর্ণনাই সূর্যের উপযোগী।কেননা,সূর্য নিজ দহনক্রিয়ায় ব্যাপক তাপ ও আলো উৎপাদন করে।

চাঁদের আরবী প্রতিশব্দ হল (আরবী ) কোরআন চাঁদকে (আরবী ) বলেছে।এর অর্থ হল‘ স্নিগ্ধ আলোদানকারী।’অর্থাৎ প্রতিফলিত আলো দেয়।কোরআনের বর্ণনা চাঁদের আসল প্রকৃতির সাথে খাপ খায়।চাঁদ নিজ থেকে আলো দেয় না।বরং তা এমন এক নিষ্ক্রীয় জিনিস যার উপর সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব ঘটে।কোরআনে কখনও চাঁদকে (আরবী )কিংবা (আরবী ) বলা হয়নি এবং সূর্যকেও (আরবী )কিংবা (আরবী ) বলা হয়নি।

এর দ্বারা বুঝা যায় যে,কোরআন সূর্য ও চাঁদের আলোর মধ্যকার পার্থক্যকে স্বীকার করে।

নিম্নের আয়াত,চাঁদ ওসূর্যের আলোর প্রকৃতি উল্লেখ করেছে।আল্লাহ বলেনঃ

“তিনিই সত্তা যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জল এবং চাঁদকে স্নিন্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।”সুরা ইউনুস-৫

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেনঃ

“তোমরা কি লক্ষ্য করনা যে,আল্লাহ কিভাবে সাত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন,সেখানে চাঁদকে রেখেছেন স্নিন্ধ আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে ?”- সুরা নূহ-১৫-১৬

মহান কোরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান চাঁদ ও সূর্যের আলোর ব্যবধানের ব্যাপারে অভিন্ন কথা বলে।


সূর্যের আবর্তন

দীর্ঘদিন ব্যাপী ইউরোপীয় দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করত যে,পৃথীবি মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং সূর্য সহ অন্যান্য জিনিসগুলো একে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরে।এ ভূকেন্দ্রিক ধারণা,পাশ্চাত্যে খৃষ্টপৃর্ব ২য় শতাব্দীতে টলেমীর যুগ থেকে বিদ্যামান ছিল।১৫১২ খৃঃ নিকোলাস কোপারনিকাস গ্রহের গতি আছে মর্মে- সূর্যকেন্দ্রিক তত্ব দেন।এই তত্বে বলা হয়,সৌরজগতের কেন্দবিন্দু- সূর্য গতিহীন।কিন্তু অন্যান্য গ্রহগুলো একে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরে।

১৬০৯ খৃঃ জার্মান বিজ্ঞানী ইউহান্নাস কেপলার ‘Astronomia Nova’নামক একটি বই প্রকাশ করেন।তিনি তাতে মত প্রকাশ করেন যে, গ্রহগুলো শুধুমাত্র সূর্যের চারদিকে ডিম্বাকৃতির কক্ষপথেই চলে না,বরং সেগুলো নিজ নিজ কক্ষপথে অনিয়মিত গতিতে আবর্তিত হয়।এ জ্ঞানের আলোকে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের পক্ষে সৌরজগতের বহু বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হয়েছে,যার মধ্যে দিন রাতের বিষয়টি অন্যতম।

এসকল আবিষ্কারের পর ধারনা করা হয় যে, সূর্য স্থিতিশীল যা পৃথিবীর মত নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে না।আমি স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় ভুগোলে এ ভুল মতটি পড়েছি বলে মনে পড়ে।

আমরা এখন কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি ব্যাখ্যা করবো।আল্লাহ বলেনঃ

“তিনি সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং চাঁদ-সূর্য। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (সূরা আম্বিয়া -৩৩)

এ আয়াতে (আরবী)শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে যা (আরবী) থেকে এসেছে। শাব্দিক অর্থ সাঁতার কাটা। এ শব্দটি কোন জিনিসের গতি বুঝানোর জন্য ব্যবহূত হয়। আপনি যমীনে কোন ব্যাক্তির জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করলে এর অর্থ এটা নয় যে, তিনি গড়াগড়ি দিচ্ছেন। বরং এর অর্থ হবে তিনি হাটেন বা দৌড়ান।আর পানিতে অবস্থানকারী কোন ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করলে এর অর্থ তিনি ‘ভাসেন’ হবে না, বরং এর অর্থ হবে, তিনি সাঁতার কাটেন।

অনুরূপভাবে আপনি যদি শব্দটি আকাশ সম্পকির্ত কোন জিনিস,যেমন সূর্য সম্পর্কে ব্যবহার করেন,তখন এর অর্থ শুধু মহাশূন্যে উড়া নয়,বরং এর অর্থ হল,তা মহাশূন্যে আবর্তিত হয়। স্কুলের অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তকে এ সত্যটি উল্লেখ আছে যে,সূর্য নিজ কক্ষপথে ঘুরে। সূর্যের নিজ কক্ষে আবর্তনকে বুঝার জন্য টেবিলের উপরে সূর্যের প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা দরকার। চোখ বাঁধা না হলে যে কেউ সূর্যের প্রতিকৃতিটি পরীক্ষা করতে পারে। দেখা গেছে,সূর্যের রয়েছে অবস্থান স্থলসমূহ যা প্রতি ২৫দিনে একবার আবর্তন করে থাকে। অর্থাৎ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করতে সূর্যের প্রায় ২৫ দিন সময় লাগে।

সূর্য প্রতি সেকেন্ডে মহাশূনে ২৪০ কিলোমিটার গতিতে চলে। আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে একবার তার আবর্তন করতে ২০০ মিলিয়ন বছর সময় লাগে।

আল্লাহ কোরআন মজীদে বলেনঃ

“সূর্য নাগার পেতে পারে না চাঁদের এবং রাত আগে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।” সূরা ইয়াসিন -৪০

এ আয়াতে এমন সব বৈজ্ঞানিক সত্য রয়েছে, যা মাত্র সম্প্রতি আধুনিক জ্যোতিষ শাস্ত্র আবিষ্কার করেছে। সেগুলো হল,চাঁদ ও সূর্যের স্বতন্ত্র কক্ষপথ আছে এবং সেগুলো নিজস্ব গতিতে মহাশূন্যে ভ্রমন করছে।

সূর্য সৌরজগতকে নিয়ে যে নির্দ্দিষ্ট স্থানের দিকে চলছে,সে স্থানটি আধুনিক জ্যোতিষশাস্ত্র সুনির্দ্দিষ্টভাবে আবিষ্কার করেছে। এর নামকরণ করা হয়েছে সৌর শৃঙ্গ বা (Solar Apex )। সৌরজগত মহাশূন্যে যে দিকে ধাবিত হয়,সে দিকটির অবস্থান বর্তমানে যথার্থ ও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং সেটি হল বৃহদাকারের এক গ্রুপ তারকা। Consellation of Hercules(Alpha Lyrae )

চাঁদ নিজ কক্ষপথে অতটুকু সময়ে একবার আবর্তন করে,পৃথিবীর চারদিক ঘুরতে যতটুকু সময় লাগে। একবার ঘুরে আসতে তার সাড়ে ২৯ দিন সময় লাগে।

কোরআনের আয়াতের বৈজ্ঞানিক যথার্থতা সম্পর্কে যে কেউ আশ্চর্য না হয়ে পারেনা। আমাদের কি এ প্রশ্নের উপর চিন্তা করা উচিত নয় যে, কোরআনের জ্ঞানের উৎস কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

এই লিখা সম্পর্কে কোন মতমত থাকলে মন্তব্যে করে জানালে উপকৃত হব। ধন্যবাদ।

Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)