ছোটবেলায় আমরা অনেকেই কাগজের প্লেন বানিয়ে আকাশে উড়িয়েছি তবে এই কাগজের প্লেনই যে গড়তে পারে বিশ্বরেকর্ড এ রকম ধারণা নিশ্চয়ই কারো ছিল না আর এই কাজটি করেছেন জন কলিন্স অন্য রকমের এক রেকর্ড গড়তে কাগজের প্লেন বানিয়ে উড়িয়েছিলেন জন কলিন্স। সে প্রচেষ্টায় সফল হয়ে নিজের নামিটিও লিখে দিয়েছেন "গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস" এর পাতায়। কাগজ প্লেন! তাতে কি? বিশ্ব রেকর্ড তো হলো! :)
কাগজের প্লেন উড়িয়ে বিশ্বরেকর্ডের পরিকল্পনা অবশ্য তার মাথায় ছিল না আর এই অদ্ভুত ধরনের আয়োজনটি করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো শহরের জন কলিন্স। অনেকেই তাকে "পেপার অ্যারোপেন গাই" বলে ডাকেন প্রায় চার বছর ধরে পরিকল্পনাটি করেছিলেন কলিন্স। এ জন্য পড়াশোনা করেছেন কাগজকে বিভিন্ন আকার দেয়ার জাপানি বিদ্যা 'অরিগামি' বিষয় নিয়ে। আরো পড়াশোনা করেছেন বায়ুতে বিমান ও অন্যান্য বস্তুর চলাচল বিষয় "এরোডাইনামিকস" নিয়ে।
অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজের মতো করে করেছেন প্লেনের ডিজাইন! ডিজাইন নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও কলিন্স জানতেন নিজে থ্রো করলে কখনই বিশ্ব রেকর্ড করা হবে না; কারণ, পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করার জন্য যে শক্তিতে প্লেনটি ছুঁড়ে মারা দরকার ঠিক ততটা শক্তি তার শরীরে নেই খুঁজতে শুরু করলেন শক্তিশালী থ্রো স্পেশালিস্ট। এ কাজে আদর্শ মনে হলো আমেরিকান ফুটবল লিগের খেলোয়াড়দের, প্রথমে কথা বললেন ক্যালের কোয়ার্টার ব্যাক মাইক পোলাস্কির সঙ্গে একসঙ্গে কাজও শুরুও করেন। কিন্তু গলার সার্জারির কারণে সরে যেতে বাধ্য হন পোলাস্কি।
কলিন্সের সঙ্গে যোগ দেন পোর্টল্যান্ড স্টেটের জিমি। দীর্ঘ এক বছর একসঙ্গে কাজ করার পর বিশ্বরেকর্ডটি নিজের করে নেন! তার ভাষ্যে, "এ অর্জনটির জন্য জনের সঙ্গে অনেক সময় ধরে কাজ করতে হয়েছে। অবশেষে পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলেছি আমরা আমি খুবই গর্বিত" রেকর্ড গড়ার পর জানান তিনি।
বিশ্বরেকর্ড করার পর ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায় জো'র, "কাগজের প্লেন বানিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে সেগুলো উড়াতাম এটি ছিল আমার খুবই প্রিয় খেলা। কাগজের প্লেন উড়িয়ে বিশ্বরেকর্ড করার আইডিয়াটিও দারুণ লেগেছে" এক বছরের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি বলেছেন, "অনেকেই মনে করতে পারেন এ আর এমন কি? এ তো সামান্য কাগজের প্লেনই। কাগজ দিয়ে বানিয়ে আকাশে উড়ানো কোনো ব্যাপারই না! অনেক দূরেও যায় কিন্তু বদ্ধ পরিবেশে বাতাসের আনুকূল্য ছাড়াই বিশ্বরেকর্ড ভাঙার মতো দূরত্ব অতিক্রম করা শুধু কঠিন নয়, খুব কঠিন। এ জন্য প্রয়োজন শক্তি, দৈহিক ভারসাম্য এবং নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ, প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করতে হয় প্লেন উড়ানোর সময়।" রেকর্ডটি করার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল বড় বদ্ধ খালি একটি জায়গা, জায়গা পাওয়াটাও ছিল কঠিন!
অনেক খুঁজে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাকরামেন্টো শহরের কাছে ম্যাকেলান এয়ারফোর্স বেসের একটি হ্যাঙ্গার বেছে নেন রেকর্ড স্থাপনের জন্য। আমন্ত্রণ জানানো হয় গিনেস কর্তৃপক্ষ এবং সাংবাদিকদের! উপস্থিত ছিলেন জন আর জোরের আপনজন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সব মিলিয়ে সেদিন দশবার কাগজের প্লেন বানিয়ে আকাশে উড়ান জো, চতুর্থবারে হয় রেকর্ড! উল্লাসে ফেটে পড়েন অতিথিরা, ২২৬ ফুট ১০ ইঞ্চি দূরত্ব অতিক্রম করেছিল প্লেনটি এবার তিনি পরিকল্পনা করেছেন তিনশ' ফুটে নিয়ে যাওয়ার।
0 মন্তব্যসমূহ
এই লিখা সম্পর্কে কোন মতমত থাকলে মন্তব্যে করে জানালে উপকৃত হব। ধন্যবাদ।
Emoji