Ad Code

Responsive Advertisement

জিহাদ উদ্ধার অভিযানের সাহসী সেই পাঁচ তরুণ

ফায়ার সার্ভিস ব্যর্থ। তাদের উদ্ধার কার্যক্রমে সফলতা বলতে কিছুই নেই। কোটি টাকায় কেনা ওয়াসার অত্যাধুনিক ক্যামেরার কার্যক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ জনগনের মধ্যে। ২৩ ঘণ্টা পর জিহাদকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণা দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিলেন। উদ্ধারের সরঞ্জাম সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল। জিহাদকে না পেয়ে পুরো দেশের মানুষ বেদনাগ্রস্ত।

জিহাদ উদ্ধার অভিযানের সাহসী সেই পাঁচ তরুণ
জিহাদ উদ্ধার অভিযানের সাহসী সেই পাঁচ তরুণ

ঠিক সেই সময় এক দল যুবক এগিয়ে আসলো তাদের কথা এভাবে একটি নিষ্পাপ বাচ্চাকে পাইপের ভেতর ফেলে রেখে আসা যায় না। যেখানে একের পর এক সব প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্যরা ব্যর্থ, সেখান থেকেই তারা দেখালেন আশার আলো। মৃত হোক আর জীবিত হোক শিশুটিকে এভাবে পাইপের ভেতর রেখে চলে যাওয়া যাবে না। মাত্র এক ঘণ্টার অভিযানে মিথ্যা প্রমাণ করলেন নানা 'বিশেষজ্ঞ' তথ্য। ২২ ঘণ্টার হতাশা কাটিয়ে ৩০০ ফুটের গভীর পাইপ থেকে শুধু জিহাদের নিথর দেহখানি নয়, গোটা জাতিকেই যেন মিথ্যার এক গভীর অন্ধকার গহ্বর থেকে বের করলেন।

জিহাদ উদ্ধার অভিযানের সাহসী সেই পাঁচ তরুণ

গতকাল সব অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছেন সেই যুবকরা। তারা কেউ প্রশিক্ষিত নন। জিহাদকে উদ্ধারের ইচ্ছাশক্তিই তাদের সফল করেছে। আর তারা যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন দণ্ডায়মান তিনটি রডের টুকরো। রডগুলোর ওপরের অংশে আর মাঝ বরাবর বৃত্তাকারে রড দিয়ে ঝালাই করা ছিল।

নিচের অংশে প্রত্যেকটির মাথায় বর্শার মতো পাত লাগানো ছিল ঝালাই করে। অনেকটা খাঁচার মতো। খাঁচায় জিহাদ ঢুকে গেলে নিচ থেকে আটকে যাবে। আর বেরোতে পারবে না। এরপর তাকে টেনে তোলা হবে। এতে প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে পুরনো একটি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ছোট্ট টর্চলাইট। জিহাদ যে পাইপে পড়ে গিয়েছিল, তার পাশেই ছোট্ট একটি ওয়ার্কশপে বসে এ যন্ত্রটি তৈরি করেন তারা। এর নাম দেওয়া হয়েছে 'কামড়ি'। কেউ কেউ বলছেন খাঁচা। আর সেই কামড়িতেই সফলতা মেলে। এই কামড়ি দিয়েই জিহাদকে তুলে আনা হয় গভীর নলকূপের পাইপ থেকে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর প্রশিক্ষিত বাহিনীকে পরাস্ত করে জিহাদকে তুলে আনা সেই যুবক কারা? উত্তরটাও সোজাসাপ্টা।

 
 

সেই যুবকেরা বিশেষ কেউ নন। কেউ ছাত্র, কেউ আবার ক্ষুদ্র দোকানি। তাদের মধ্যে মিরপুর মনিপুরের বাসিন্দা সুজন দাস রাহুল পড়েন রাজধানীর রমনার আইইবিতে। সফলতার আরেক সৈনিক শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুন বেসরকারি একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র। তাদের সঙ্গে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুরাদ, আনোয়ার হোসেন আর ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানি আবদুল মজিদ। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা গাড়ি ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন সফল উদ্ধার অভিযানের সমন্বয় করেন। এ ক'জনই এ সফলতার মহানায়ক। রহমত উল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মুকুল আর মনির হোসেনের মতো আরও কয়েক যুবক নানা প্রযুক্তি নিয়ে চেষ্টা করেছিলেন জিহাদকে উদ্ধারে।

রাজধানীর মেরাদিয়ার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মুন সমকালকে বলেন, শুক্রবার রাতেই তিনি বন্ধু রাহুলকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানেই তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় ফারুক হোসেনসহ অন্য যুবকদের। তারা ভাবতে থাকেন কীভাবে শিশুটিকে উদ্ধার করা যায়। সেই ভাবনা অনুযায়ী লোহার রড দিয়ে তারা যন্ত্রটি তৈরি করেন। শুক্রবার রাতেই ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কার্যক্রমের এক ফাঁকে তারা যন্ত্রটি ফেলেছিলেন। ব্যর্থ হয়ে আবারও যন্ত্রের উন্নয়নমূলক কাজ করেন। এবার এর সঙ্গে জুড়ে দেন একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও টর্চলাইট। দণ্ডায়মান রডের নিচে যুক্ত করেন বর্শার ফলার মতো লোহার ছোট দণ্ড। গতকাল দুপুরে সেটি নিয়েই তারা সফলতা পান।


জিহাদ উদ্ধার অভিযানের সাহসী সেই পাঁচ তরুণ
 

শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুনের দাবি, নিরন্তর চেষ্টাতেই তারা সফল হন। কামড়ি যন্ত্রটি প্রায় ২৩৫ থেকে ২৪০ ফুট ভেতরে যাওয়ার পরে তা কোনোকিছুর সঙ্গে আটকে গেছে বলে টের পান। ধীরে ধীরে টেনে ১০০ মিটারের মধ্যে যখন কামড়ি আসে তখন ক্যামেরায় বোঝা যায় শিশুটি সেখানে আটকে আছে।

সুজন দাস রাহুল বলেন, তখন আমাদের হাত-পাও শক্ত হয়ে আসছিল। একে-অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। বারবারই অচেনা জিহাদের মুখটি চোখের সামনে ভেসে আসছিল। এর পরই আমরা বর্শার ফলায় 'ভারী বস্তুটি' আটকে দিই। ধীরে ধীরে টেনে তুলি তা। তখন নিশ্চিত হলেও আরও প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর টেনে তুলেই চিৎকার দিই। জিহাদকে নিয়ে যাই হাসপাতালে।

জিহাদ উদ্ধার অভিযানের সাহসী সেই পাঁচ তরুণ
জিহাদ উদ্ধার অভিযানের সাহসী সেই পাঁচ তরুণ


উদ্ধারকারী অন্য সদস্য মুরাদ আর আনোয়ার হোসেন জানান, যত্ন করেই আমরা রশিটা টান দিই। চেষ্টা করি জিহাদকে জীবিত উদ্ধার করতে। কিন্তু ওর নিথর দেহটা পাওয়া গেল। এর পরই উদ্ধারকারী দলের এ দুই সদস্য জনতার ভিড়ের মধ্যে চোখ মুছেন। ততক্ষণে উদ্ধারকারী রাহুল, ফারুক আর আবদুল্লাহ ফায়ার কর্মীদের সহায়তায় জিহাদকে নিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা দেন।

উদ্ধারকর্মী আবদুল মজিদ সাভারের রানাপ্লাজা ধসের সময়ও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেন। তার দাবি, ফায়ার সার্ভিস শনিবার ভোর থেকে তাদের কাজ গুটিয়ে নেয়। তবে দুপুর আড়াইটার দিকে তারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তাদের শুরুতে কাজ করতে দিলে হয়তো জিহাদকে জীবিত পাওয়া যেত। তার ভাষ্য, তারা শুক্রবার থেকেই কামড়ি যন্ত্রটি পাইপে ফেলার চেষ্টা করছিলেন। তবে ফায়ার আর ওয়াসার বড় কর্তা ও প্রকৌশলীরা থাকায় সে সুযোগ পাননি। রাতে যদি ভেতরের সরু পাইপটি কেটে ফেলা না হতো তাহলে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো।

সফলতা অর্জন: স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধার অভিযানের সমন্বয়ক ফারুক হোসেন জানান, তারা কামড়ি যন্ত্রের রডগুলো সংগ্রহ করেন খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার এলাকা থেকে। এরপর সেখান থেকেই ঝালাই কাজটি সারেন। কামড়ি যন্ত্রের দণ্ডায়মান রডের বর্শার পাতই সফলতার মূল সূত্র। সেটি কাজ করে কীভাবে, জানতে চাইলে ফারুক জানান, তারা ১৮ ইঞ্চি ব্যসের পাইপে ১৪ ইঞ্চি ব্যসের যন্ত্রটি নামান। যন্ত্রের তিনটি রডের নিচে পৃথকভাবে লাগানো বর্শার মধ্যে দুটো বর্শা নড়াচড়া করার জন্য ও একটি বর্শা টেনে আনার কাজের উপযোগী করে বানানো হয়। 

আরও কিছু সংবাদঃ 

শিশু জিহাদকে যেভাবে উদ্ধার করা হলো, এতে প্রজুক্তির ব্যবহার যেভাবে হলো। কারা ছিল সেই সাহসী তরুন দল সহ ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল তথ্যের জন্য দেখে নিতে পারেন প্রযুক্তি.কম এর অন্যান্য প্রতিবেদন এবং সংবাদগুলো।

১) জিহাদ উদ্ধার অভিযানের সাহসী সেই পাঁচ তরুণ @ www.projuktee.com/2014/12/news12.html
 

২) সাধারণ মানুষেরাই পারে অসাধারণ কাজ - সকল কাজের মূলেই হচ্ছে ইচ্ছা শক্তি!  @ http://www.projuktee.com/2014/12/zihad.html


৩) ফারুকের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সফল যন্ত্রের নকশা - জিহাদ উদ্ধার!  @ http://www.projuktee.com/2014/12/bd-tech.html


৪) বিদেশী প্রযুক্তিতে লাভ হয়নি, অবশেষে দেশীয় প্রযুক্তিতে উদ্ধার! @ http://www.projuktee.com/2014/12/projuktee-tech.html

 

শিশু জিহাদকে যেভাবে উদ্ধার করা হলো তার কিছু ভিডিও চিত্র নিম্নে দেওয়া হলঃ



প্রযুক্তি.কম অন্তরে বাজে প্রযুক্তির ছন্দ। শুধুমাত্র প্রযুক্তি পেতে, প্রযুক্তির সংবাদ জানতে ২৪ ঘন্টা www.projuktee.com সাথেই থাকুন। সকল সংবাদ, লেখা, প্রতিবেদনের একমাত্র কপিরাইট শুধুমাত্র www.projuktee.com। প্রযুক্তি.কম (www.projuktee.com) যেকোন সংবাদ, লেখা, প্রতিবেদন কপি, নকল করা সম্পুর্ন নিষেধ। ধন্যবাদ প্রযুক্তি.কম এর সাথে থাকার জন্য। প্রযুক্তি.কম (www.projuktee.com) অন্তরে বাজে প্রযুক্তির ছন্দ।

শিশু জিহাদের মৃত্যুতে আমরা প্রযুক্তি.কম (www.projuktee.com) পরিবার শোকাহত এবং পাশাপাশি অভিনন্দন জানাই সেই সাহসী পাঁচ তরুণকে। প্রযুক্তি.কম (www.projuktee.com) এর তাদের কৃতত্ত কোনদিনও ভুলবেনা।

প্রযুক্তি.কম অন্তরে বাজে প্রযুক্তির ছন্দ। শুধুমাত্র প্রযুক্তি পেতে, প্রযুক্তির সংবাদ জানতে ২৪ ঘন্টা www.projuktee.com সাথেই থাকুন। সকল সংবাদ, লেখা, প্রতিবেদনের একমাত্র কপিরাইট শুধুমাত্র www.projuktee.com। প্রযুক্তি.কম (www.projuktee.com) যেকোন সংবাদ, লেখা, প্রতিবেদন কপি, নকল করা সম্পুর্ন নিষেধ। ধন্যবাদ প্রযুক্তি.কম এর সাথে থাকার জন্য। প্রযুক্তি.কম (www.projuktee.com) অন্তরে বাজে প্রযুক্তির ছন্দ।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ