Ad Code

Responsive Advertisement

সল্প খরচে সৌর বিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছি আমরা ।।



দিনের পর দিন যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে হ্রাস পাচ্ছে পৃথিবীর কয়লা, তেল, গ্যাসভাণ্ডার । যখন আমাদের ব্যবহার করার মতো এসব প্রাকৃতিক সম্পদ আর থাকবে না । তখন কি হবে ভেবেছেন?

বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই এই প্রশ্নের বের করে রেখেছেন । শক্তির বিকল্প উৎসের সন্ধান দিয়েছেন আমাদেরকে । এর মধ্যে অন্যতম হল সূর্যালোক থেকে প্রাপ্ত শক্তি বা সৌরবিদ্যুৎ । যা আজকাল হরহামেশাই যা ব্যবহার হচ্ছে বাসাবাড়িতে । কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ তৈরিতে যে সৌরকোষ কাজে লাগানো হয় তার কার্যকারিতা এখনো পর্যন্ত সন্তোষজনক নয়(অবশ্য বিজ্ঞানীরা কখনোই তাদের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন!) তাই আরও ভাল সৌরকোষ তৈরির চেষ্টা অনেকদিন ধরেই চলেছে । এবং মনে হচ্ছে এক্ষেত্রে এবার তারা অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছেন । তবে তার আগে সাধারণ সৌরকোষ সম্পর্কে কিছু বলা দরকার ।

সৌরকোষের কাজ হচ্ছে সূর্যের আলোর সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা । প্রকৃতির অসংখ্য বিচিত্র ব্যাপারের একটি হল আলোর তড়িৎ ক্রিয়া । উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বিজ্ঞানীরা হতভম্ব হয়ে লক্ষ্য করেছিলেন যে কিছু কিছু ধাতুর উপর আলো পড়লে তা থেকে ইলেকট্রন নির্গত হয় তথা বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয় । কেন এমনটা হয় তা তারা বলতে পারেননি । বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আইনস্টাইন ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেন । তিনি দেখান, আসলে প্রত্যেক ধাতুর ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট একটা কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি কম্পাঙ্কের আলো আপতিত হলে এই ঘটনা ঘটতে পারে । সিলিকনের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান আলোতেই এই কর্মকাণ্ড চলে । তাই সৌরকোষ তৈরিতে সিলিকনকে বেছে নেওয়া হয়েছে ।

সৌরকোষ বা ফটো ভোল্টাইক সেলে এক ধরনের মাইক্রোওয়্যার থাকে যাদের কাজ হচ্ছে সূর্যরশ্মি শোষণ করা । এটি তৈরি করা হয় সিলিকন দিয়ে । মাইক্রোওয়্যারের ভেতরেও সিলিকন থাকে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ করে তারা ।

সমস্যা কিন্তু অন্য জায়গায় । বর্তমানে ব্যবহৃত ফটোভোল্টাইক সেলের মোটসিলি কনের অর্ধেকটাই যাচ্ছে মাইক্রোওয়্যারের পিছনে । ফলে খরচও বাড়ছে বহুগুণে । এমন কোন উপায় কি নেই যার মাধ্যমে মাইক্রোওয়্যারের সিলিকনের পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়? ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির(ক্যালটেক) প্রখ্যাত বিজ্ঞানী হ্যারিঅ্যাট ওয়াটার এবার সেই পথেরই সন্ধান দিয়েছেন ।
হ্যারি এবং তাঁর দলের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল এমনভাবে মাইক্রোওয়্যারে সিলিকনের পরিমাণ কমিয়ে আনা যাতে আগের চেয়ে সূর্যের আলো কম শোষিত না হয়। এই কাজ করতে গিয়ে তারা কিপটেমির(!) চরম নিদর্শন দেখিয়ে মোট সিলিকনের মাত্র ১% ব্যয় করেছেন এর পিছনে! কীভাবে হল তা একটু দেখা যাক।

হ্যারিঅ্যাট ওয়াটার এবং তাঁর সহযোগী নাথানলুইস ও মিচেল কাইজেনবার্গ সিলিকনের ঘনীভূত বাষ্প চালনা করেন মাইক্রোওয়্যার তৈরি করার জন্য। তারপর সেটাকে আলো শোষণ করতে পারে এমন একটি পদার্থ দ্বারা আচ্ছাদিত করেন । এরপর বিশেষ একধরণের পলিমারকে এর সাথে সংযুক্তকরেন । এই পলিমারের বিশেষত্ব হল, এটি যতক্ষণ না পর্যন্ত ৯০ ভাগ আলো শোষিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে বিক্ষিপ্ত করে অর্থাৎ ছড়িয়ে দেয় । এত কায়দা করে দেখা গেল শেষ পর্যন্ত মাইক্রোওয়্যারের পিছনে মাত্র ১% সিলিকন খরচ হয়েছে । কিপটেমির চূড়ান্ত নমুনা বটে । এর ফলে উৎপাদন খরচও অর্ধেকে নেমে আসার কথা ।

তবে নতুন সৌরকোষের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে । পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এর যান্ত্রিক দক্ষতা মাত্র ৮%(সাধারণ সৌরকোষের ক্ষেত্রে যা ২০% । তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে তারা এটাকে দ্বিগুণ করতে পারবেন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ