|
তরুন ফটোগ্রাফার দের জন্য ফটোগ্রাফি ও ক্যামেরা বেসিক !! |
একটি ছবির মান নির্ভর করে একজন ক্যামেরা ম্যানের উপর। অর্থাৎ যিনি ছবি তুলবেন তার দক্ষতার উপরই ছবির ভালমন্দ অনেকাংশে নির্ধারিত হয়ে যায়। তাই তরুন ফটোগ্রাফার দের ছবি তোলার সময় যথেষ্ট মনোযোগী হতে হবে। ছবিতে রেজুলেশন ও মেগা পিক্সেল যত বেশি হবে ছবির মানও তত ভাল হবে। আর আই জন্য নতুন ফটোগ্রাফার দের ফটোগ্রাফি ও ক্যামেরা বেসিক জানাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
ফটোগ্রাফির ব্যাপারে লেখার আগে একটু ক্লিয়ার হয়ে নিন ক্যামেরায় দিয়ে কিভাবে ছবি তোলা হয় । এই ব্যাপারটা পুরো টাই আলোর খেলা। কোন বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো এসে ক্যামেরার লেন্সের ভিতর দিয়ে সূক্ষ্ম ছিদ্রের অপরপাশে পর্দার উপর পড়লে সেখানে বস্তুটির একটা উলটা প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। এখন সেই প্রতিবিম্বকে আমরা যদি কোনোভাবে সংরক্ষন করতে পারি তাহলে সেটাই হবে ওই বস্তুর ছবি। নিচের ছবিটা দেখলে পুরো ব্যাপারটা আরো পরিস্কার হবে। এটাই ক্যামেরার ব্যাসিক কাজ । প্রথমদিকের পিনহোল ক্যামেরা থেকে হালের ডি.এস.এল.আর পর্যন্ত কোনোটাই এই ফর্মুলার বাইরে নয়।
চলুন দেখি কোন ক্যামেরায় ছবি তোলার কাজটি কিভাবে সম্পাদন হয়। এখানেও ব্যাসিক ব্যাপার একইরকম । প্রথমে আমরা দেখব পুরানো আমলের ফিল্ম ক্যামেরার কার্যপ্রণালী। ক্যামেরায় আলো ঢোকার জন্য একটা ছোট ছিদ্র থাকে, সেটাকে বলে শাটার। ফিল্ম ক্যামেরায় এই শাটার খুব অল্প সময়ের জন্য খুলে আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। এই সময়টুকুর মধ্যে ক্যামেরার সামনের বস্তুর একটা উল্টা প্রতিবিম্ব ভিতরে থাকা ফিল্মের উপর পড়ে। অ্যানালগ ক্যামেরার এই ফিল্ম খুব সেনসিটিভ, বেশি সময় ধরে অথবা খুব তীক্ষ্ণ আলো পড়লে ফিল্মের সেই অংশটুকু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কোডাক অথবা ফুজির একটা ফিল্মে সাধারনত ৩৬ থেকে ৪০ টি ছবি তোলা যেতো । তারপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডার্করুম থেকে প্রিন্ট করে বের করে আনা হতো বহু আরাধ্য সেই ছবি।
এখানে একটি ফিল্ম ক্যামেরার কর্মপদ্ধতি এবং যন্ত্রাংশের নাম দেয়া হলো। ভিউফাইন্ডার দিয়ে সামনে থাকা লক্ষ্যবস্তু দেখার জন্য একটি মিরর বা আয়না থাকে। বাটন চাপ দিলে শাটারটি খুলে যায় এবং লক্ষ্যবস্তু থেকে আসা আলো ফিল্মের উপর পড়ে।
এবার চলুন ডি.এস.এল.আর অথবা ডিজিটাল ক্যামেরা প্রসঙ্গে আলোচনা করা যাক ।
এই মূল প্রক্রিয়াও আগের মতই । এখানে শুধুমাত্র ফিল্মের বদলে থাকে সেন্সর। একে বলে CCD (Charge-Coupled Device) সেন্সর। সিসিডি ডিজিটাল ক্যমেরার একটি সিলিকন চীপ যেখানে ছবি রেকর্ড হয় । CCD বা CMOS সেনসর হচ্ছে ডিজিটাল ক্যমেরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দামী ডিভাইস। এটি মিলিয়ন পিক্সেলের সমন্বয়ে গঠিত। আলো যখন লেন্সের মধ্য দিয়ে এসে এই সেনসরের ফটোএকটিভ লেয়ারে আঘাত করে তখন ঐ লেয়ারের নিচের পিক্সেলে একটি বৈদ্যুত্যিক চার্জ উৎপন্ন হয়। আলোর পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পিক্সেলের বৈদ্যুত্যিক চার্জ বিভিন্ন রকমের হয়। মিলিয়ন পিক্সেলের বৈদ্যুত্যিক চার্জগুলোর সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় একটি ডিজিটাল ছবি।
এখন একটু কথা বলি ডি.এস.এল.আর ক্যামেরায় কি কি অংশ থাকে তা নিয়ে । নিচের ছবিটি দেখলে ব্যাপারটা অনেকটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
1. LCD Display
2. Sensor
3. Memory
4. Battery
5. Flash
6. Shutter
7. Lens
1. LCD Display (এল সি ডি ডিসপ্লে)
প্রত্যেকটি ডিজিটাল ক্যামেরার এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ । পয়েন্ট সুট ক্যামেরায় ভিউফাইন্ডার থাকেনা তাই ডিসপ্লে দেখে ছবি তুলতে হয় কিন্তু ডি.এস.এল.আর-এ এটার কাজ তোলার পর ছবি দেখার জন্য। এখনকার কিছু ক্যামেরায় অবশ্য লাইভ ভিউ নামে একটা অপশন পাওয়া যায় যেটা দিয়ে মিরর বাইপাস করে সরাসরি ডিসপ্লে দেখে ছবি তোলা যায় বাট সেগুলোর ফ্রেমিং-এ একটু ঝামেলা থাকে।
2. Sensor (সেন্সর)
ডিএসএলআর ক্যামেরায় যেই সেন্সর থাকে সেটা নরমাল পয়েন্ট সুট ক্যামেরায় থেকে ১০/২০ গুন বড় হয় ভালো কোয়ালিটি এবং কালার ডেপথ এর জন্য। এই সেন্সরের একটা মজার ব্যাপার হল মাক্সিমাম ক্যমেরার মধ্যেই অপশন থাকে সেন্সরকে ভাইব্রেট করে ডাস্ট রিমুভ করার। সাধারনতঃ লেন্স চেঞ্জ করার সময় ক্যামেরার ভিতর প্রচুর পরিমানে ধুলা ঢুকে।
3. Memory (মেমরি)
এই ব্যাপারে আর নতুন কিছু বলার নেই। আপনার ক্যামেরায় তোলা সব ছবি জমা হবে যেই স্টোরেজ-এ সেটাই হচ্ছে মেমরি। মেমরির সাইজ যতো বড় হবে তত বেশি ছবি তুলতে পারবেন আর মেগাপিক্সেল বাড়িয়ে ছবি তুললে ছবির সাইজ একটু বড় হয় এটা সবারই জানা।
4. Battery (ব্যাটারি)
ডিএসএলআর ক্যামেরা সাধারনত ব্যাটারি লাইফ বেশীক্ষণ থাকেনা কারন এর মধ্যে অনেকরকম মোটর, ফ্ল্যাশ এবং এডভান্স অপশন থাকে যেগুলোতে একটু বেশি ব্যাটারি লাইফ দরকার হয়। ফ্ল্যাশ ছাড়া ফটোগ্রাফি করলে এক ব্যাটারি দিয়ে ৬০০ এর মত ছবি তোলা সম্ভব।
5. Flash (ফ্ল্যাশ)
ক্যামেরার সাথে যেই ফ্ল্যাশ থাকে সেটাকে বলে পপ আপ ফ্ল্যাশ. এটা দিয়ে ইনডোর ফটোগ্রাফি এবং কোনরকম কাজ চালানো যায় কিন্তু আপনি যদি আলো নিয়ে ছবিতে খেলাধুলা করতে চান তাহলে আলাদাভাবে ফ্ল্যাশ অ্যাড করতে হবে। ডিএসএলআর ক্যামেরা যেখানে এক্সটারনাল ফ্ল্যাশ লাগানো হয় ওই পয়েন্টকে বলে হট শু (Hot Shoe).
7. Lens (লেন্স)
ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনলেন মানে হলো অনেক বড় একটি সিস্টেমের ছোট্ট একটা পার্ট সাথে করে বাসায় নিয়ে আসলেন। দুনিয়ায় যে কত্ত রকমের লেন্স আছে সেটা এর পর বুঝতে পারবেন। স্ট্রেইট কয়েকটা কথা বললেই বুঝে যাবেন ব্যাপারটা। যদি ওয়াইড এঙ্গেল-এ অথবা পোট্রেট করতে চান তাহলে লাগবে প্রাইম লেন্স, ওয়াইল্ড ফটোগ্রাফি বা ন্যাচারাল ফটোগ্রাফির জন্য টেলি-লেন্স, খুব কাছের ক্ষুদ্র জিনিশের ছবির জন্য মাইক্রো লেন্স। লেন্স নিয়ে আলাপ শুরু করলে আর একটা আর্টিকেল হয়ে যাবে।
1 মন্তব্যসমূহ
ও রে ভাই জউস... অনেক কিছু জানলাম ফটোগ্রাফি সম্পর্কে
উত্তরমুছুনএই লিখা সম্পর্কে কোন মতমত থাকলে মন্তব্যে করে জানালে উপকৃত হব। ধন্যবাদ।
Emoji