Ad Code

Responsive Advertisement

সত্যিই কি স্যার আইনস্টাইন টাইম মেশিন বানানোর ফরমুলা দিয়েছিলেন?

আমরা জানি সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। অতীত বর্তমান হয়ে সময় চলেছে ভবিষ্যতের দিকে যেন একমুখী প্রবাহ। নিউটন তার বিখ্যাত গ্রন্থ প্রিন্সিপিয়াতে গতিসুত্রের প্রেক্ষাপটে সময় সম্পর্কে একটা কথা লিখলেন, “Absolute, true and mathematical time of itself and from its own nature, flows equally with relation to everything external.” [চরম প্রকৃত এক গানিতিক সময় তার অন্তর্নিহিত ধর্মানুযায়ী বাহ্যিক অন্য সব কিছুর প্রস্তাব মুক্ত হয়ে সমমানে বয়ে চলে]। যদিও তখনকার যুগে প্রায় সকলেই এই সূত্র মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু কথাটা যে সব সময় সত্য তা কিন্তু না।  আমরা যেমন সময়ের জন্য থামতে পারি তেমনি সময়ও আমাদের জন্য থামতে পারে অর্থাৎ আপেক্ষিক।
 কিন্তু ঘটনাটা ঘটবে একটি বিশেষ শর্ত-এ, বা বলতে গেলে একটি বিশেষ নির্দেশ তন্ত্রে। নির্দেশতন্ত্র হল এমন একটা স্থান বা জায়গা যেখান থেকে আমরা কোনো বস্তুর অবস্থা, অবস্থান, প্রকৃতি ইত্যাদি পরিমাপ করতে পারি। এককথায় সেই পরিমাপক স্থানকেই পদার্থবিদ্যার ভাষায় নির্দেশেতন্ত্র বলে। যেমন একটি ট্রেন চলছে, ট্রেনের ভেতর একটা ছেলে বল নিয়ে লোফালুফি করছে। ট্রেন চলতে শুরু করল। ট্রেনটি একসময় ধরা যাক a cm/s¬ সমবেগ নিয়ে যেতে শুরু করল। এখন যে যাত্রী ট্রেনের ভেতর ছিল সে দেখবে যে বলটি গতি সরলরৈখিক। কিন্তু ট্রেনের বাইরের দর্শকের সাপেক্ষে বলটির গতি কিরূপ হতে পারে। হিসেব করলে দেখা যাবে গতিপথটি হবে উপবৃত্তাকার বা অর্ধবৃত্তাকার বা অধিবৃত্তাকার। নিচের চিত্রটি দেখুন -




সুতরাং এই উপরোক্ত পরীক্ষা থেকে দেখা গেল যে ভিন্ন ভিন্ন পর্যবেক্ষণ স্থান বা নির্দেশতন্ত্র থেকে পরিমাপক বিষয় ভিন্ন ভিন্ন মান যুক্ত হয়।

আমরা সাধারণ জীবনে কোনো গতিশীল বস্তুকে পরিমাপ করি সাধারণ পদার্থবিদ্যার নিয়ম অনুসারে। এর একটা পরীক্ষার সাহায্যে বলি। রাম ও শ্যাম দুই বন্ধু রাস্তায় হেঁটে চলেছে। রাম নিজে ৬ কিমি/ঘঃ সমবেগে ও শ্যাম নিজে ৪ কিমি/ঘঃ সমবেগে পরস্পরের দিকে হেঁটে চলেছে। তাহলে রাম শ্যামকে কি ৪ কিমি/ঘঃ বেগে চলতে দেখবে? মোটেই না। রাম দেখবে যে শ্যাম (৬ + ৪) =  ১০ কিমি/ঘঃ বেগে যাচ্ছে ও শ্যামও রামকে ১০ কিমি/ঘঃ বেগে যেতে দেখবে। আবার রাম আর শ্যাম উভয়ই একই দিকে চলতে শুরু করলে রামের সাপেক্ষে শ্যামের ও শ্যামের সাপেক্ষে রামের বেগ হবে (৬ – ৪) = ২ কিমি/ঘঃ। এ

ই ধরনের ঘটনা আমরা সাধারণ জীবনে পর্যবেক্ষণ করে থাকি।

কিন্তু আলোর ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা অন্যরকম। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ম্যাক্সওয়েল তরঙ্গতত্ত্ব আবিষ্কার করেন যা পরবর্তীকালে নানা পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণিত হয়। কিছুকাল পরে বিজ্ঞানী হার্তজ আলোর বেগের মান নির্ণয় করলেন যার মান ৩ x ১০৮ মি/সেঃ। কিন্তু এর থেকে আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে এই বেগ কার সাপেক্ষে? ১৮৮৭ সালে মাইকেলসন ও মর্লি নামে দুই বিজ্ঞানী পরস্পর দুটি সমকোণি আলোকরশ্মির গতিবেগের তুলনা করেন। তাছাড়া তারা সূর্যের চারিদিকে সারা বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন অবস্থানে সূর্য থেকে আসা আলোর বেগ নির্ণয় করে দেখেন তাতে আলোর গতিবেগের কোনো পার্থক্য নেই। এই পরীক্ষা থেকে ১৮৯৩ সালে জর্জ ফিটজেরাল্ড ও হেন্ড্রিক লরেন্জ ধারনা দেন যে কোনো বস্তুপিণ্ড ইথার নামক মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে চলার সময় তাদের ক্ষেত্রে তাদের সময় ও দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়ে তাদের সাপেক্ষে আলোর বেগ একই রাখে। আসলে আমরা যেমন জানি শব্দতরঙ্গ জড়মাধ্যমে চলাচল করে তেমনি তখন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন আলো তথা সকল তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গই ইথার নামক মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে। এর পরবর্তীকালে এলেন মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন, যিনি তার স্পেশাল থিওরী অফ রিলেটিভিটির দ্বারা সারা পৃথিবীর মানুষকে হেলিয়ে দিলেন। ১৯০৫ সালে তিনি তার গবেষণাপত্রে দেখালেন যে ইথার নামক কোনো মাধ্যম নেই এবং সকল বস্তুর [তা গতিশীল হোক বা স্থির] সাপেক্ষে আলোর বেগের মান হবে অভিন্ন। এই বেগ পর্যবেক্ষকের গতি নিরপেক্ষ ও গতির দিক নিরপেক্ষ।

আইনস্টাইনের স্পেশাল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি [আমি যাকে বলি টাইম মেশিনের থিওরী] বোঝার জন্য নির্দেশতন্ত্রের জ্ঞান থাকা জরুরী। আইনস্টাইনের জেনেরাল থিওরী অফ রিলেটিভিটি বলে আলো ভর যুক্ত বস্তুর প্রভাবে বেঁকে যায়। কিন্তু আমি তো টাইম মেশিনের সম্বন্ধে লিখতে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করে এসকল জিনিস নিয়ে আলোচনা করলাম কি জন্যে। করলাম এই জন্যে যে স্পেশাল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি এর মূল তত্ত্বই হল টাইম মেশিনের গল্প।

কিন্তু এসব বলার আগে বলে নেওয়া দরকার সময় পরিভ্রমনের সাধারণত ২ টি দিক আছে। একটি হল অতীত এবং অন্যটি ভবিষ্যত। অতীতে ভ্রমণ করার কয়েকটি সুবিধা, যেমন আপনি অতীতে গিয়ে আপনার অসম্পূর্ণ কাজ গুলি করে আসতে পারবেন অনেকটা এরকম ধরুন মাধ্যমিকে আপনার রেজাল্ট ভালো হয়নি কিন্তু যেহেতু আপনার অতীতের সেই প্রশ্নগুলির উত্তর জানা আছে তাই আপনি অনায়াসেই সেগুলি অতীতে গিয়ে সমাধান করতে পারবেন। তাছাড়া আপনার জন্মের আগে যেসকল ঘটনা ঘটে গেছে তার প্রত্যক্ষ দর্শন করতে পারবেন। যেমন বলা যায় আইনস্টাইনের দেখা সাক্ষাৎ করে আসলেন। এসব শুনতে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু একথা নিশ্চয়ই শুনেছেন যে যেখানে সুবিধা সেখানে অসুবিধা থাকবেই। কিন্তু আপনি কি কখনও এটা ভেবে দেখেছেন যে যদি কেউ অতীতে গিয়ে আপনাকে বা আপনার জন্মানোর আগেই আপনার পিতা মাতাকে মেরে ফেলে, তাহলে আপনার বর্তমান অস্তিত্বের কী হবে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না, তাই এগুলো কে বিজ্ঞানের ভাষায় প্যারাডক্স বলে (যা বাংলায় বলা হয় হেঁয়ালি)। আসলে প্যারাডক্স গুলো ভাবতে

খুব মজার। সব থেকে জনপ্রিয় প্যারাডক্স হল গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স। এক্ষেত্রে এক বদমাশ লোক টাইম মেশিনে করে অতীতে পাড়ি দিয়ে তার ঠাকুরদাকে হত্যা করে এল। এর ফলে পরিণামে তার কি হবে? হয়তো সে মারা যেতে পারে। কিন্তু সে যদি মারা যায় তবে টাইম মেশিনে করে সে অতীতে করে পাড়ি দিল কীভাবে? সত্যিই এসকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার কিংবা সম্ভবই না [অন্তত আমার সেটা মনে হয়]। তাই আমার মনে হয় অতীতে সময় পরিভ্রমণ করাও সম্ভব না (অন্তত এই তত্ত্ব অনুসারে)। বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানের এক শাখা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে আমরা জানতে পেরেছি যে অতীতে ভ্রমণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে একটা বিশেষাকৃতি নল অতীতে যাবার টাইম মেশিনের কাজ করছে যাকে ওয়ার্মহোল [বাংলায় কীটগহ্বর বলা হয়] বলা হয়। এই ওয়ার্মহোল গুলির অবস্থান অতিক্ষুদ্র স্কেলে অণু-পরমাণুর চেয়ে ছোট আরও ক্ষুদ্রতর স্কেলে যাকে বলে কোয়ান্টাম ফোম। এখানেই ওয়ার্মহোল প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় আবার মুহূর্তের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু এরা সত্যিই দুটি আলাদা জায়গা তথা সময়ের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। এভাবে আমরা অতীতে ভ্রমণ করতে পারব যদি আমরা তত পরিমাণে ছোটো হতে হবে অথবা কোনো একটি ওয়ার্মহোল বানিয়ে তাকে টাইম মেশিন হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। যদিও কোনোদিন তা হয় তাহলে বর্তমানের এনার্জি অতীতে যাবার অনুমতি পাবে এবং অতীতে গিয়ে বিশাল পরিমাণ এনার্জির সার্জের সৃষ্টি করবে। ফলে ওয়ার্মহোল সৃষ্টি হবার প্রায় সাথে সাথেই ওয়ার্মহোলটি ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে আগের মতোই মানুষের পক্ষে অতীতে ভ্রমণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।

কিন্তু এখানেই অনেকে থেমে যান। এই পর্যন্ত বলার পর অনেকেই ভাবেন যে টাইম ট্র্যাভেল কখনই সম্ভব না। কিন্তু আমি শুরুতেই বলে দিয়েছি যে টাইম ট্র্যাভেলের দুটি দিক রয়েছে। একটি অতীত এবং অন্যটি ভবিষ্যৎ। অনেকে ভাবতে পারেন যে এটা কীরকম কথা হল? আমি যখন নিজে বর্তমানে রয়েছি আর আমার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কেবল আমার কাজের ওপর। তাহলে আমি কেমন করে ভবিষ্যতে যেতে পারব? ভবিষ্যতে গিয়ে কি আমি আমার বয়স্ক রূপটি দেখতে পারব? তাছাড়া আমার মন তো সর্বদা পরিবর্তনশীল। যেকোনো মুহূর্তে আমার মন বদলে যেতে পারে তাহলে তো আমার ভবিষ্যতও মুহূর্তে মুহূর্তে পরিবর্তন হবার কথা। কিন্তু আমি এখানে ভবিষ্যত বলতে বোঝাচ্ছি তা কোনো ক্ষণস্থায়ী ভবিষ্যত নয়, একেবারে পাকাপোক্ত ভবিষ্যত। এই ভবিষ্যতে আপনি কেবল একাই থাকবেন, আপনার কোনো দ্বৈত প্রতিরূপ থাকবে না কেননা আপনিই ভবিষ্যতে যাচ্ছেন তাহলে তার মানে আপনি আপনার বর্তমান সময় থেকেই ভবিষ্যতে যাচ্ছেন। একটু সহজ করে বলি, ধরুন ২০১১ সালে আপনি একটা রকেটে চেপে কাছাকাছি একটা নিউট্রন স্টারে গেলেন। যেহেতু নিউট্রন স্টারের ভর খুব বেশি তাই এর নির্দেশতন্ত্রের সময়ও খুব স্লো। ধরুন এর পৃষ্ঠের ওপর দাঁড়িয়ে একটা খুব শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছেন, তাহলে আপনি কি দেখবেন? টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যাবে যে পৃথিবীতে সকল কাজকর্ম খুব দ্রুত হচ্ছে বা সবই ফাস্ট ফরওয়ার্ডের মতো ছুটছে। কারণ নিউট্রন স্টারের সময় স্লো হওয়ায় আপনার সাপেক্ষে বাইরের তথা পৃথিবীর নির্দেশতন্ত্রের সময় ফাস্ট। ধরাযাক, এভাবে চলতে চলতে ১০ মিনিট সময় পার হয়ে পৃথিবীর সাপেক্ষে ৫ বছর পার করলেন। এরপর রকেটে চেপে পৃথিবীতে গেলেন। এভাবে আপনি ভবিষ্যতে ৫ বছর অতিক্রম করলেন। এবার আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি পৃথিবীতে গিয়ে কি আপনার প্রতিরূপ দেখতে পারবেন? অবশ্যই না। তাই ভবিষ্যতে আপনার দ্বৈত প্রতিরূপ থাকবে না।

             এখন, ভবিষ্যতে ভ্রমণ করার অর্থ বলতে খুবই শর্টকাটে বর্তমান থেকে নিজের নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে বাইরের নির্দেশতন্ত্রের সময় কে ফাস্ট করে দেওয়া। সুতরাং বলতে গেলে নিজের সময়কে স্লো করা [বাইরের নির্দেশতন্ত্র এর সাপেক্ষে]। আচ্ছা কেউ যদি প্রশ্ন করে যে নিজের সময় স্লো হলে বাইরের জগৎ আমার সাপেক্ষে কী হবে? উত্তর বলতে গেলে ভাবতে হবে গোড়া থেকে। নিজের সময় স্লো মানে বাইরের সময় ফাস্ট আর বাইরের সময় ফাস্ট হলে আমি দেখব বাইরের সব কিছুই আমার সাপেক্ষে ফাস্ট ফরওয়ার্ডের মতো ছুটছে। তেমনি তাদের মনে হবে যেন আমি কচ্ছপের মতো চলছি। এটাই হল ভবিষ্যতে যাবার অন্যতম রাস্তা, একটা শর্টকাট, রহস্যে ভরা মজাদার ভ্রমণ এক সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের দিকে।

এত সুন্দর রাস্তার ব্যাপারে তো বললাম, কিন্তু এমন রাস্তা বানাবো কীভাবে? উত্তর যানা আছে আপনাদের কারোর? যদি যানা থাকে তবে খুব ভালো আর যদি না যানা থাকে তবে আমার পক্ষে যতটা সম্ভব আমি জানিয়ে দিচ্ছি। নিম্নোক্ত একটি ছোট্ট পরীক্ষার সাহায্যে যদি প্রমাণ করতে পারি যে সময় আপেক্ষিক, তাহলেই টাইম মেশিনের সূত্র আমরা সহজেই বার করে নিতে পারব।

ধরাযাক,

একটা কাল্পনিক ট্রেনের যার ছাদের নিচের দিকে একটি পূর্ণ প্রতিফলক আটকানো আছে, যার মেঝেতে একটি ছেলে অমল দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা টর্চলাইট নিয়ে। এখন ট্রেনটি ট্রেনের বাইরের নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষে স্থির অবস্থায় আছে। অমল টর্চটি মেঝের ওপর প্রদত্ত চিত্রের ন্যা

য় রাখল ফলে আলোটির প্রতিফলন হল নিম্নদিকে। এক্ষেত্রে ভেতরের এবং বাইরের নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষে আলোর গতিপথ হবে সরলরৈখিক যা AB পথ বরাবর (চিত্র – ১)। এখন ধরলাম ট্রেনটি কোনো এক সময় ২.৪ x ১০৮ মি/সে  সমবেগ নিয়ে চলতে শুরু করল। এখন যেহেতু ট্রেনটি ঐ বেগে গতিশীল তাই অমল ও তার টর্চ লাইটও ওই একই বেগে গতিশীল [এখানে প্রতি ধাপে মনে রাখতে হবে যে একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমে আলোর বেগ সর্বদা ধ্রুবক] । তাদের সাপেক্ষে  অর্থাৎ সমবেগে চলমান নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষে টর্চ নির্গত আলোর গতিপথ তখনও হবে সরলরৈখিক। কিন্তু বাইরের নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষে এই গতিপথ হবে Zigzag আকৃতির (চিত্র – ২)।




                 ধরি, আলো ২ নং চিত্রের মতো AB থেকে BC পথে গেল এবং যেতে মোট ১০ সেকেন্ড সময় লাগল। অতএব ট্রেনটি একই সময়ে AD দূরত্ব অতিক্রম করে। এখন শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ ৩ x ১০৮ মি/সে। সুতরাং AB+BC পথে আলো কর্তৃক অতিক্রান্ত দূরত্ব ৩ x ১০৮x ১০ মি = ৩ x ১০৯ মি। একইভাবে ১০ সেকেন্ডে ট্রেন কর্তৃক অতিক্রান্ত দূরত্ব AD+DC = ২.৪ x ১০৯ মি। যেহেতু ত্রিভু

জ ABD ও ত্রিভুজ BCD সর্বসম হওয়ায় AB = BC = ১.৫ x ১০৯ মি এবং AD = DC = ১.২ x ১০৯ মি। [পাঠকের পড়ার সুবিধার জন্য আলো কর্তৃক অতিক্রান্ত সময়ের মান এরকম নেওয়া হল]

এখন, পিথাগোরাসের উপপাদ্যের সাহায্যে ত্রিভুজ ABD থেকে পাই,




অর্থাৎ বাইরের নির্দেশ নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে আলোর যেখানে প্রতিফলন ঘটে আবার ট্রেনের সেই আগের বিন্দুতে ফিরে আসতে সময় লাগছিল ১০ সেকেন্ড সেখানে ভেতরের নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে সেই একই বিন্দুতে আসতে সময় লাগে ৬ সেকেন্ড। অতএব সময় আপেক্ষিক। যেহেতু ট্রেনের ভেতরের নির্দেশতন্ত্রের সময় বাইরের থেকে স্লো তাই ভেতরে অবস্থানকারী কোনো ব্যক্তি বাইরের দুনিয়ার অনেকটা সময় কিন্তু ভেতরের নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে কম সময় কাটিয়ে ভবিষ্যতে ভ্রমণ করতে পারবে। অতএব এই ভাবে চিন্তা করলে ভবিষ্যতে ভ্রমণ করা সম্ভব। থিয়োরিটিকালি এই থিয়োরির সাহায্যে আমরা অদূর ভবিষ্যতে যেতে পারব আর সেজন্য আমাদের শুধু অত্যন্ত বেগ লাভ করতে হবে বা We have to go REALLY VERY VERY VERY FAST!!! আর এজন্য যে যন্ত্র তৈরি করতে হবে তাকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রচুর পরিমাণ শক্তি দিতে হবে। এবং বলতে গেলে বর্তমান প্রযুক্তিতে এত গতিবেগযুক্ত মানুষকে বহন করার মতো যন্ত্রও তৈরি করা যাচ্ছে না [অবশ্য লার্জ হেড্রন কোলাইডার এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে আবিষ্কৃত সবচেয়ে শক্তিশালী কনা ত্বরক যা প্রোটনকে আলোর বেগের ৯৯.৯

৯৯৯১% বেগে ত্বরান্বিত করে]।

এখন, উপরোক্ত তত্ত্ব থেকে এটা তো বার করে নিলাম যে সময় আপেক্ষিক কিন্তু বেগ বাড়লে সময় ধীর বা স্লো কতটা হবে তারও যদি একটা সূত্র বার করতে পারি তাহলে সেটাই হবে টাইম মেশিনের সূত্র। চলুনতো চেষ্টা করে দেখা যাক।

এক্ষেত্রে আবার উপরোক্ত চিত্রের সাহায্য নিতে হবে।

ধরি, ২ নং চিত্রে ত্রিভুজ ABD এর angle ABD এর সাপেক্ষে ভূমি BD এবং অতিভুজ AB এবং লম্ব AD




সুতরাং, এই যে সূত্রটি প্রতিষ্ঠিত হল সেটা সময় ও বস্তুর বেগের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করছে। আর এটাই হল স্যার আইনস্টাইনের স্পেশাল থিওরী অফ রিলেটিভিটি যা প্রকৃতপক্ষে একটা

টাইম মেশিনের সূত্র।

এখন ধরাযাক, কোনো একটি পরম স্থির স্থানের নিরিখে কোনো বস্তুর ভর m0 এবং v বেগে গতিশীল ওই একই বস্তুর ভর mv.

তবে ভর-সময় সূত্র হয়, কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে কোনো বস্তুর আপাত ভর এবং বস্তুটির ঐ নির্দেশতন্ত্রে প্রবহমান সময়ের গুণফল সর্বদা ধ্রুবক।




এখন, লরেন্জ ট্র্যান্সফরমেশন অনুসারে,




এখানে, γ (গামা) হল লরেঞ্জ ফ্যাক্টর, যেকোনো গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রে এর মান সর্বদা ১ এর বেশি হয়।

ব্যবহারঃ এই থিওরী অফ রিলেটিভিটির সবচেয়ে উপযোগী ও ব্যবহার্য দিক হল Mass Effect থিওরী। এটিকে বর্তমান যুগে GPS বা Global Positioning System এ ব্যবহার করা হয়। GPS হল এমন একটা Device যা কোনো বস্তুর অবস্থান জানতে সাহায্য করে। যেহেতু পৃথিবীর ভর আছে তাই এর ভর সময়কে স্লো করে দেয় যার ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরের আকাশে থাকা কোনো বস্তুর সময় পৃষ্ঠের সময়ের চাইতে তাড়াতাড়ি বয়ে চলে। তাই GPS এ যদি এই থিওরী ব্যবহার না করা হত তাহলে পৃথিবী পৃষ্ঠে থাকা কোনো বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ে প্রতিদিন গড়ে ৭ কিমিঃ ত্রুটি হত। এই তত্ত্ব থেকে পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শক্তি (E) এবং ভরের (m) ভেতর সম্পর্ক স্থাপন করা। এই সম্পর্কটি একটি বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ইকুয়েশন যা হল E=mc2 ; যেখানে m হল বস্তুর ভর, c হল আলোর বেগ এবং E হল m ভরের তুল্য শক্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

এই লিখা সম্পর্কে কোন মতমত থাকলে মন্তব্যে করে জানালে উপকৃত হব। ধন্যবাদ।

Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)